dbdmail.com
ঢাকা , সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
বরিশাল বিভাগ সমিতির ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় বেকসুর খালাস তারেক রহমান অভিনেত্রী রুনা খানের বাবা ইন্তেকাল করেছেন কানাডা কাকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিল? নতুন বাংলাদেশে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ সরকার: প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক নারী দিবসে অদম্য নারীদের সম্মাননা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন চাপের মুখে ভারতকে কাছে টানতে চাইছে চীন বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে লুট করা স্বর্ণ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৬ ইসরায়েলকে ৪ দিনের আলটিমেটাম সৌদি আরবে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন ঢাবি ছাত্রীকে হেনস্তকারী গ্রেপ্তারকৃত কর্মচারীর মুক্তির দাবিতে শাহবাগ থানায় একদল ব্যক্তি ট্রুডোকে ‘গভর্নর’ বলে ট্রাম্পের ঠাট্টা

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে: অমর্ত্য সেন

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন

ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেছেন। ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে খবর প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

অমর্ত্য সেন বলেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। কারণ আমার মধ্যে শক্তিশালী বাঙালি পরিচয় রয়েছে। আমি ঢাকায় দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি, সেখানেই আমার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ঢাকা ছাড়াও আমার পূর্বপুরুষের ভিটা মানিকগঞ্জে প্রায়ই যেতাম। মায়ের দিক দিয়ে বিক্রমপুরের সোনারঙেও গিয়েছি। এই জায়গাগুলো আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি জানান, “শৈশবে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন এবং সেখানেই শিক্ষাজীবন চালিয়ে যান।”

বাংলাদেশের রাজনীতি ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখা জরুরি এবং অতীতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। আমি চাই বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা অব্যাহত থাকুক।”

গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান এবং আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। দেশব্যাপী সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনার কারণে অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন। তবে অমর্ত্য সেন এই দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করে বলেন, “বাংলাদেশে দলীয়ভাবে একসঙ্গে কাজ করার যে ধারা আছে, সেটি বজায় রাখা উচিত। কোনো নির্দিষ্ট দলকে এক পাশে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়। আমি আশা করি, বাঙালির স্বাধীনতা ও বহুত্ববাদ বজায় থাকবে এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচন অতীতের চেয়ে আরও নিরপেক্ষ হবে।”

বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে অমর্ত্য সেন বলেন, “তিনি আমার পুরোনো বন্ধু এবং অত্যন্ত দক্ষ ব্যক্তি। তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন।”

যখন কেউ হঠাৎ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তখন তাকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “ড. ইউনূসও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। বাংলাদেশে ইসলামিক দল রয়েছে, এখন হিন্দু দলও আছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, ড. ইউনূস তার দক্ষতা দিয়ে এই চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।”

সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রচারণার প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেন, “সংখ্যালঘু ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ বরাবরই সংখ্যালঘুদের ন্যায্য অধিকারের ব্যাপারে সচেতন এবং জামায়াতের মতো দলগুলোকে নজরদারিতে রাখে। তবে দুঃখজনকভাবে, ভারতেও মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ধরনের হামলা হোক বাংলাদেশ বা ভারত, বন্ধ হওয়া উচিত।”

তবে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করে তিনি বলেন, “অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সেনাবাহিনী রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেনি, যা অত্যন্ত ইতিবাচক।”

অমর্ত্য সেন মনে করেন, বাংলাদেশ কঠিন সময় পার করলেও এখনো আশার আলো রয়েছে। তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে আশাহত হইনি।”

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে: অমর্ত্য সেন

আপডেট সময় ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫

ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেছেন। ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে খবর প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

অমর্ত্য সেন বলেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। কারণ আমার মধ্যে শক্তিশালী বাঙালি পরিচয় রয়েছে। আমি ঢাকায় দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি, সেখানেই আমার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ঢাকা ছাড়াও আমার পূর্বপুরুষের ভিটা মানিকগঞ্জে প্রায়ই যেতাম। মায়ের দিক দিয়ে বিক্রমপুরের সোনারঙেও গিয়েছি। এই জায়গাগুলো আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি জানান, “শৈশবে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন এবং সেখানেই শিক্ষাজীবন চালিয়ে যান।”

বাংলাদেশের রাজনীতি ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখা জরুরি এবং অতীতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। আমি চাই বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা অব্যাহত থাকুক।”

গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান এবং আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। দেশব্যাপী সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনার কারণে অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন। তবে অমর্ত্য সেন এই দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করে বলেন, “বাংলাদেশে দলীয়ভাবে একসঙ্গে কাজ করার যে ধারা আছে, সেটি বজায় রাখা উচিত। কোনো নির্দিষ্ট দলকে এক পাশে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়। আমি আশা করি, বাঙালির স্বাধীনতা ও বহুত্ববাদ বজায় থাকবে এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচন অতীতের চেয়ে আরও নিরপেক্ষ হবে।”

বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে অমর্ত্য সেন বলেন, “তিনি আমার পুরোনো বন্ধু এবং অত্যন্ত দক্ষ ব্যক্তি। তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন।”

যখন কেউ হঠাৎ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তখন তাকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “ড. ইউনূসও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। বাংলাদেশে ইসলামিক দল রয়েছে, এখন হিন্দু দলও আছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, ড. ইউনূস তার দক্ষতা দিয়ে এই চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।”

সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রচারণার প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেন, “সংখ্যালঘু ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ বরাবরই সংখ্যালঘুদের ন্যায্য অধিকারের ব্যাপারে সচেতন এবং জামায়াতের মতো দলগুলোকে নজরদারিতে রাখে। তবে দুঃখজনকভাবে, ভারতেও মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ধরনের হামলা হোক বাংলাদেশ বা ভারত, বন্ধ হওয়া উচিত।”

তবে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করে তিনি বলেন, “অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সেনাবাহিনী রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেনি, যা অত্যন্ত ইতিবাচক।”

অমর্ত্য সেন মনে করেন, বাংলাদেশ কঠিন সময় পার করলেও এখনো আশার আলো রয়েছে। তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে আশাহত হইনি।”